শৈবাল চাষে নতুন সম্ভবনা
বিশ্বে শৈবালের প্রতি বছরে উৎপাদন প্রায় ১০ মিলিয়ন টন যার আর্থিক মূল্য ১২ বিলিয়ন ডলার। এ্যাকুয়াকালচার উৎপাদনে শৈবালের অবস্থান দ্বিতীয়। শৈবাল সম্ভাবনাময় জলজ উদ্ভিদ যার পুষ্টিমান অন্যান্য জলজ প্রজাতির চেয়ে কম নয়। শৈবাল চাষে উৎপাদিত সামুদ্রিক শৈবাল এনে দিতে পারে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা। আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে বিপুল পরিমাণ সমুদ্রসীমা বাংলাদেশের অধীনে আসার পর সরকার দেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সামুদ্রিক শৈবাল চাষের উদ্যোগ নিয়েছে ।
প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে প্রায় ১৪০ ধরনের শৈবাল জন্মে। এছাড়া প্যারাবন এলাকাতেও ১০ প্রকারের শৈবাল পাওয়া যায়। শৈবাল চাষ একটি নতুন উদ্যোগ এবং এর চাষ পদ্ধতি খুব সহজ। সেন্টমার্টিন দ্বীপে পরীক্ষামূলকভাবে দুটি প্রজাতি Caulera racemosa, Hypnea sp. স্থানীয় জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিভিন্ন চাষ পদ্ধতি অবলম্বন করে বাংলাদেশে প্রথমবারের মত শৈবাল চাষের সূচনা হয়। শৈবাল চাষের গবেষণা কার্যক্রমের অগ্রনায়ক ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষক ড. মোহাম্মদ জাফর। তাঁর গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে বাংলাদেশের উপকূলীয় জলরাশিতে শৈবাল চাষ সম্ভব। সামুদ্রিক শৈবাল শস্যের সম্ভাবনা খুঁজতে ২০০০ সাল থেকেই গবেষণা শুরু করেন ড. জাফর। ২০১৩ সালে এসে কাক্সিক্ষত সাফল্য পান। গবেষণাপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, এক মাস সমুদ্রতটে মোটা রশি বা জাল ফেলে রাখলেই সে জালকে ঘিরে উৎপাদিত হয় সামুদ্রিক শৈবাল। আবার উপকূলীয় অঞ্চলে যদি জোয়ার-ভাটার স্থলে রশি কিংবা বাঁশ রাখা হয়, মাসখানেকের মধ্যে সেই রশি কিংবা বাঁশের ওপরও গজাবে কোটি টাকা মূল্যের এসব সামুদ্রিক শস্য। গবেষণাপত্রে সামুদ্রিক শৈবাল কৃত্রিম উপায়ে চাষের পদ্ধতিও উদ্ভাবন করেন তিনি।
বাংলাদেশে অনেকগুলো চাষযোগ্য ও বাণিজ্যিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ শৈবাল হচ্ছে Caulera racemosa, Hypnea sp, Sargassum ।

সামুদ্রিক শৈবাল
শৈবালের ব্যবহারঃ
শৈবাল দিয়ে নুডলস জাতীয় খাবার, স্যুপ জাতীয় খাবার, সবজি জাতীয় খাবার, শরবত, সল্টেস দুধ, সমুচা, সালাদ, চানাচুর, বিস্কুট, বার্গার, সিঙ্গেরা, জেলি, ক্যান্ডি, চকলেট, পেস্টি, ক্রিমচিজ, কাস্টার্ড, রুটি, পনির, ফিশফিড, পোলট্রিফিড, সামুদ্রিক সবজি এসব খাবার তৈরি ছাড়াও এগারএগার, কেরাজিনান, এলগ্যানিক এসিড, ক্যালসিয়াম মূল্যবান দ্রব্য ও উৎপাদন হয়।
শৈবাল চাষের সুবিধা:
১. স্বল্প বিনিয়োগে শৈবাল চাষ করা সম্ভব।
২. গৃহস্থালী উপকরণ (দড়ি, বাঁশ, জার, প্লাস্টিক বয়াঃ) ব্যবহার করে চাষীরা সহজে এ চাষ পদ্ধতি শুরু করতে পারে।
৩. ভূমিহীন চাষীগণ খাস সরকারি অনাবাদি জলাভূমিতে বিনা বাধায় চাষ করতে পারবে। কারন জোয়ার ভাটার মাঝের স্থানে অধিকাংশ শৈবাল জন্মায়।
৪. কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্ব কমিয়ে আনা সম্ভব।
শৈবালের ওষুধি গুণ:
শৈবাল টিউমার, রক্তচাপ, হৃদরোগসহ নানা রোগের ঝুঁকি কমায়।
বিকল্প আয়ের উৎস:
উপকূলীয় অঞ্চলের জনগণের জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম খুব সীমিত। এ অঞ্চলের জনসাধারণ বেশিরভাগ সময় বেকার থাকে। উপকূলীয় অঞ্চলের চাষীদের বিকল্প আয়, স্থিতিশীল পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টিতে শৈবাল চাষ উল্ল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।
প্রাকৃতিক উৎস থেকে শৈবাল সংগ্রহ না করে বিভিন্ন পদ্ধতিতে শৈবাল চাষাবাদ করলে প্রাকৃতিক শৈবাল রক্ষা পায়।
শৈবাল চাষের জন্য বিবেচ্য বিষয়:
১. বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতি নির্বাচন
২. সঠিক স্থান নির্বাচন
৩. বাঁশের ফ্রেম তৈরির কৌশল
৪. শৈবাল আহরনের কৌশল শিক্ষা
৫. শৈবাল প্রক্রিয়াজাতকরণ কৌশল।

সামুদ্রিক শৈবাল
শৈবাল চাষ পদ্ধতি:
লোকজনের আনাগোনা কম ও পরিষ্কার সমুদ্রের পানিতে খুঁটি বসাতে হবে। তারপর খুঁটির দুপ্রান্তে দড়ি আটকিয়ে এবং বাঁশের ফ্রেম তৈরি করে তার মধ্যে জাল লাগিয়ে শৈবাল চাষ করা যায়। দড়ির ফাঁকের মাঝে শৈবাল টিস্যু নরম সুতা দিয়ে আটকিয়ে দিতে হবে যেন পানির স্রোতে ভেসে না যায়।
উপকূলীয় অঞ্চলের দারিদ্র্য বিমোচন, পারিবারিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা আনয়নে শৈবাল চাষ খুলে দিতে পারে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার নতুন দুয়ার। পুরুষের পাশাপাশি মহিলাদের করমসংস্থান হবে এছাড়া শৈবাল চাষ জনগণের পুষ্টির অভাব পুরণ ও রোগ প্রতিরোধে আগামী দিনে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।